বিকাশের ধারণা এবং নীতি (Concept and Principles of Development)

বিকাশ” শব্দটি মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও বৌদ্ধিক প্রক্রিয়াগুলির ধাপে ধাপে উন্নতি বোঝায়। বিকাশের কয়েকটি মৌলিক নীতি রয়েছে, যা শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াকে বুঝতে সাহায্য করে। বিকাশের ধারণা এবং নীতি (Concept and Principles of Development)

বিকাশের ধারণা এবং নীতি
বিকাশের ধারণা এবং নীতি

বিকাশের ধারণা এবং নীতি (Concept and Principles of Development)

বিকাশের ধারণা (Concept of Development):
“বিকাশ” শব্দটি মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও বৌদ্ধিক প্রক্রিয়াগুলির ধাপে ধাপে উন্নতি বোঝায়। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা শিশুর জন্ম থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর্যন্ত চলে। বিকাশ শুধু আকারের বা দৈহিক পরিবর্তন নয়, বরং শিশুর মানসিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক এবং আবেগগত পরিবর্তনকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এটি জটিল এবং বহুমুখী একটি প্রক্রিয়া, যা একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে।

বিকাশের নীতি (Principles of Development):

বিকাশের কয়েকটি মৌলিক নীতি রয়েছে, যা শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াকে বুঝতে সাহায্য করে। নিচে এগুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

১. বিকাশ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া (Development is Continuous):

  • শিশুর বিকাশ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা জন্ম থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় পর্যন্ত চলে।
  • প্রতিটি স্তরে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান পরবর্তী স্তরের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যেমন: একটি শিশু হাঁটার আগে বসতে শেখে, তারপর হামাগুড়ি দিতে শেখে, তারপরে হাঁটতে শেখে।

২. বিকাশ সুনির্দিষ্ট ক্রমানুসারে হয় (Development Follows a Definite Sequence):

  • শিশুদের বিকাশে কিছু নির্দিষ্ট ধারা বা ক্রম লক্ষ্য করা যায়, যেমন: শিশুরা প্রথমে মাথা উঁচু করতে শেখে, তারপর বসতে, হামাগুড়ি দিতে, তারপর হাঁটতে শেখে।
  • বিকাশ সবসময় নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় ঘটে এবং এই ক্রমানুসারে কোনো পরিবর্তন হয় না।

৩. সাধারণ থেকে বিশেষ দিকে বিকাশ (Development Proceeds from General to Specific):

  • বিকাশের প্রথম পর্যায়ে শিশুর প্রতিক্রিয়া সাধারণ থাকে এবং পরে এই প্রতিক্রিয়া নির্দিষ্ট হয়।
  • যেমন: শিশুরা প্রথমে গোটা হাত ব্যবহার করে কোন বস্তু ধরার চেষ্টা করে, পরে নির্দিষ্ট আঙ্গুল দিয়ে সেই বস্তু ধরে।

৪. মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিকাশ (Cephalocaudal Development):

  • এটি সেই নীতি, যেখানে বিকাশ মাথা থেকে শুরু হয়ে পায়ের দিকে যায়।
  • উদাহরণস্বরূপ, শিশুরা প্রথমে তাদের মাথা ধরে রাখতে শেখে, এরপর ধীরে ধীরে নিচের দিকের অংশগুলি, যেমন: হাত, কোমর এবং পা বিকশিত হয়।

৫. মধ্য থেকে প্রান্তে বিকাশ (Proximodistal Development):

  • এই নীতিতে বিকাশ শরীরের কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে প্রান্তে যায়।
  • প্রথমে শিশুর শরীরের কেন্দ্রীয় অঙ্গগুলি (যেমন: মেরুদণ্ড) বিকশিত হয়, তারপর হাত ও পায়ের মত প্রান্তীয় অঙ্গগুলি বিকশিত হয়।

৬. বিকাশের হার ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয় (Development Varies from Child to Child):

  • প্রতিটি শিশুর বিকাশের হার এক নয়। একজন শিশু দ্রুত শিখতে পারে, আরেকজন সময় নিতে পারে।
  • বিভিন্ন শিশু বিভিন্নভাবে এবং ভিন্ন সময়ে শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক দিক থেকে বিকশিত হয়। কোনো শিশু তাড়াতাড়ি হাঁটা শিখতে পারে, আবার অন্য কেউ দেরিতে।

৭. বিকাশ বিভিন্ন মাত্রায় হয় (Development is Multidimensional):

  • বিকাশ একক কোন প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি বিভিন্ন মাত্রায় ঘটে—শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগিক এবং বৌদ্ধিক দিকগুলোতে।
  • শিশুর বিকাশের সময় এই প্রতিটি দিক একে অপরের উপর প্রভাব ফেলে।

৮. বিকাশ একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া (Development is Holistic):

  • বিকাশ সামগ্রিক হয়, অর্থাৎ শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আবেগিক দিকগুলো একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
  • উদাহরণস্বরূপ, শিশুর শারীরিক বিকাশ মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে এবং মানসিক বিকাশ সামাজিক বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।

৯. বিকাশ সহজাত ও পরিবেশগত কারণে ঘটে (Development is Influenced by Heredity and Environment):

  • শিশুর বিকাশে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য (পিতামাতা থেকে প্রাপ্ত গুণাবলী) এবং পরিবেশ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শিশুর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, মনোভাব এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশে বংশগতির পাশাপাশি পরিবার, সমাজ এবং স্কুলের মতো পরিবেশগত উপাদানগুলি প্রভাব ফেলে।

১০. সংবেদনশীল পর্যায় (Critical or Sensitive Period):

  • বিকাশের কিছু পর্যায়কে সংবেদনশীল বা সমালোচনামূলক বলা হয়, যখন শিশুর কোনো নির্দিষ্ট দক্ষতা শিখতে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
  • যেমন: ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ২ থেকে ৫ বছর বয়সকে একটি সংবেদনশীল পর্যায় হিসেবে ধরা হয়।

১১. বিকাশ প্রভাবশালী (Development is Predictable):

  • শিশুদের বিকাশের কিছু নির্দিষ্ট ধারা পূর্বাভাসযোগ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিশুর বয়সের সাথে সাথে তাদের কিছু শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে।

১২. সমন্বিত বিকাশ (Integrated Development):

  • শিশুর বিকাশ একক কোনও দিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শারীরিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক, আবেগিক এবং ভাষাগত বিকাশ একে অপরের সাথে সমন্বিতভাবে এগোয়।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি শিশুর ভাষাগত বিকাশ তার সামাজিক বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলে এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আবেগিক বিকাশকে প্রভাবিত করে।

১৩. শিক্ষা ও শেখার ভূমিকা (Role of Learning in Development):

  • বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।
  • নতুন অভিজ্ঞতা ও শেখা শিশুর বিকাশের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষ করে, পঠন-পাঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশে সাহায্য করে।

১৪. সামাজিক সম্পর্কের গুরুত্ব (Importance of Social Interaction):

  • শিশুর সামাজিক বিকাশে পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শিশুরা তাদের পরিবার, বন্ধু এবং শিক্ষকদের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা অর্জন করে। এই সম্পর্কগুলো তাদের আবেগগত বিকাশে প্রভাব ফেলে।

১৫. স্বতন্ত্রতা (Individuality):

  • প্রতিটি শিশু স্বতন্ত্র এবং তাদের বিকাশের হার এবং ধরন ভিন্ন হতে পারে।
  • শিশুর দক্ষতা, মানসিকতা, শারীরিক ক্ষমতা এবং শেখার পদ্ধতি ভিন্ন হয়, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।

১৬. শেখার গতি (Rate of Learning):

  • প্রতিটি শিশুর শেখার গতি এক নয়। কিছু শিশু দ্রুত শেখে, আবার কিছু শিশু ধীরে ধীরে শেখে।
  • শিক্ষকদের উচিত এই পার্থক্যগুলো বুঝে শিক্ষাদান করা, যাতে শিশুরা নিজ নিজ গতি অনুযায়ী শিখতে পারে।

১৭. বিকাশের ধীরগতির বা ব্যাঘাতের ঝুঁকি (Risk of Developmental Delays or Interruptions):

  • কিছু শিশুদের বিকাশ ধীরগতিতে হতে পারে বা ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর পেছনে কারণ হতে পারে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ, পারিবারিক সমস্যাগুলি বা পরিবেশগত কারণ।
  • সময়মতো সঠিক যত্ন ও সহায়তা শিশুর এই ধীরগতির বিকাশকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

১৮. লিঙ্গভেদে বিকাশের পার্থক্য (Gender Differences in Development):

  • লিঙ্গের ভিত্তিতে শিশুর বিকাশে কিছু পার্থক্য দেখা যেতে পারে।
  • উদাহরণস্বরূপ, মেয়েরা সাধারণত ভাষাগত বিকাশে দ্রুত হয়, আর ছেলেরা শারীরিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশ লাভ করে। তবে এই পার্থক্যগুলো ছোট, এবং বিকাশের অন্যান্য প্রভাবশালী ফ্যাক্টরের তুলনায় ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

১৯. প্রারম্ভিক অভিজ্ঞতার প্রভাব (Effect of Early Experiences):

  • শিশুর প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তার বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
  • একটি শিশুর জীবনের প্রাথমিক বছরগুলোতে দেওয়া সঠিক যত্ন ও শিক্ষা তার বৌদ্ধিক ও আবেগিক বিকাশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

২০. সক্রিয় অংশগ্রহণ (Active Participation):

  • শিশুর বিকাশে তার নিজস্ব সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শিশুরা নিজেরা শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে তা তাদের বুদ্ধি ও শারীরিক ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

Download Any Book PDF | Download Any Ebook | All Book PDF Free Download |

২১. আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও বিকাশ (Emotional Regulation and Development):

  • শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তার বিকাশের অংশ। শিশুদের প্রাথমিক বয়সেই তাদের আবেগগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানো উচিত, যা তাদের আবেগগত বিকাশকে সহায়তা করবে।

২২. পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভূমিকা (Role of Observation and Assessment):

  • শিশুদের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা এবং মূল্যায়ন করা শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মাধ্যমে তারা শিশুর শক্তি ও দুর্বলতাগুলি বুঝতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা পদ্ধতি বা সহায়তা প্রদান করতে পারেন।

২৩. উদ্দীপনা ও উৎসাহ (Stimulation and Encouragement):

  • শিশুর বিকাশে উদ্দীপনা এবং উৎসাহ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে নতুন জিনিস শেখার জন্য যথেষ্ট উদ্দীপনা ও উৎসাহ প্রদান করা উচিত।
  • উদাহরণস্বরূপ, খেলাধুলা, সৃজনশীল কাজ এবং শৈল্পিক কার্যক্রম শিশুর বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।

২৪. বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ (Creating an Enabling Environment):

  • শিশুর বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর বিকাশে পরিবার, স্কুল, কমিউনিটি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট প্রভাবিত করে।
  • শিশুকে একটি ভালো পরিবেশ দেওয়া হলে তার বিকাশ সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে হয়।

২৫. বিকাশের সামঞ্জস্যতা (Development is Consistent and Orderly):

  • বিকাশ একটি সুনির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করে, এবং প্রতিটি নতুন দক্ষতা বা ক্ষমতা পূর্বের দক্ষতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
  • যেমন, একটি শিশু যখন প্রথমে হামাগুড়ি দেয়, তখন সে নিজেকে শারীরিকভাবে সামঞ্জস্য করতে শিখে, পরে এটি তাকে হাঁটতে শেখার জন্য প্রস্তুত করে।

২৬. ভিন্ন ভিন্ন বিকাশের ক্ষেত্র (Different Areas of Development):

  • শিশু বিকাশকে সাধারণত পাঁচটি প্রধান ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়:
    • শারীরিক বিকাশ (Physical Development): উচ্চতা, ওজন, মাংসপেশির শক্তি, মোটর দক্ষতা (হাঁটা, দৌড়ানো)।
    • বৌদ্ধিক বা জ্ঞানীয় বিকাশ (Cognitive Development): চিন্তা করা, সমস্যা সমাধান করা, স্মৃতি ও ধারণক্ষমতা।
    • ভাষাগত বিকাশ (Language Development): ভাষা শেখা, কথা বলা, শোনা ও যোগাযোগ করা।
    • সামাজিক বিকাশ (Social Development): সমাজের নিয়ম-কানুন শেখা, অন্যদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা।
    • আবেগগত বিকাশ (Emotional Development): আবেগ চিহ্নিত করা ও নিয়ন্ত্রণ করা, আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।

২৭. বিকাশ প্রাথমিক বছরে দ্রুত হয় (Rapid Development in Early Years):

  • জন্মের প্রথম কয়েক বছর শিশুদের বিকাশ অত্যন্ত দ্রুত হয়। এই সময়ে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশও অত্যন্ত সক্রিয় থাকে।
  • এই কারণেই প্রাথমিক বয়সের শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ এই সময়ে শিশুদের শেখার ক্ষমতা এবং পরিবেশগত প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে।

২৮. স্বনির্ভরতার বিকাশ (Development of Independence):

  • শিশুর বিকাশের একটি বড় দিক হলো স্বনির্ভরতা শেখা। শিশু ধীরে ধীরে নির্ভরশীলতা থেকে স্বনির্ভরতা অর্জন করে।
  • যেমন, শিশুরা প্রথমে বাবা-মা বা অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীল থাকে, পরে তারা নিজেরা খাবার খাওয়া, পোশাক পরা ইত্যাদি শিখে নেয়।

২৯. অনুকরণ ও পর্যবেক্ষণ (Imitation and Observation):

  • শিশুরা তাদের আশেপাশের মানুষ, বিশেষত তাদের পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবদের আচরণ অনুকরণ করে।
  • পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা সামাজিক নিয়ম এবং আচরণ শেখে, যা তাদের সামাজিক বিকাশে সাহায্য করে।

৩০. বিকাশে সমর্থনকারী প্রাপ্তবয়স্কদের ভূমিকা (Role of Supportive Adults in Development):

  • বাবা-মা, শিক্ষক এবং অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের ভূমিকা শিশুর বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • শিশুর শেখার প্রক্রিয়া সহজ করতে প্রাপ্তবয়স্কদের সহানুভূতিশীল ও সাহায্যকারী হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি শিশু যখন কথা বলতে শিখছে, তখন তাকে ধৈর্যের সাথে সাহায্য করা এবং উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।

৩১. খেলার ভূমিকা (Role of Play in Development):

  • খেলা শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • খেলার মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, সম্পর্ক তৈরি এবং শারীরিক শক্তি বাড়ানোর সুযোগ পায়।

৩২. সমাজের সংস্কৃতির প্রভাব (Influence of Culture on Development):

  • শিশুর বিকাশে তার সমাজের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ গভীর প্রভাব ফেলে। প্রতিটি সমাজের নিজস্ব মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠান শিশুর সামাজিক এবং মানসিক বিকাশে প্রভাবিত করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, সমাজের ভাষা, ধর্ম, আচার-আচরণ এবং ঐতিহ্য শিশুর বিকাশের সাথে জড়িত।

৩৩. বিকাশে পুষ্টির ভূমিকা (Role of Nutrition in Development):

  • সঠিক পুষ্টি শিশুর শারীরিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
  • পুষ্টির অভাব শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে প্রাথমিক বছরগুলোতে সঠিক পুষ্টি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বড় ভূমিকা পালন করে।

৩৪. বিকাশে চাপের প্রভাব (Impact of Stress on Development):

  • শিশুর বিকাশে অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা ট্রমা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিশু যদি মানসিকভাবে চাপে থাকে বা কোন পারিবারিক সমস্যা বা সহিংসতার মধ্যে বড় হয়, তাহলে তার মানসিক এবং আবেগিক বিকাশে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • মানসিক চাপের কারণে শিশুদের শেখার ক্ষমতা এবং সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩৫. বিকাশে প্রতিবন্ধকতা (Barriers to Development):

  • শিশুর বিকাশে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে, যেমন: শারীরিক সমস্যা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, দরিদ্র পারিবারিক অবস্থা, অপুষ্টি, এবং শিক্ষার অভাব।
  • এসব সমস্যার কারণে শিশুর বিকাশের গতি ধীর হতে পারে বা ব্যাহত হতে পারে।

৩৬. স্বাস্থ্য এবং বিকাশের সম্পর্ক (Relationship Between Health and Development):

  • শিশুদের স্বাস্থ্য এবং তাদের বিকাশ একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। একটি সুস্থ শিশু মানসিক, শারীরিক ও আবেগিকভাবে ভালভাবে বিকশিত হতে পারে।
  • অপরদিকে, বারবার অসুস্থ হওয়া বা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতা শিশুর বিকাশের গতিকে ধীর করে দিতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট (Key Points):

  • বিকাশ একটি ধারাবাহিক এবং ধাপে ধাপে চলমান প্রক্রিয়া।
  • এটি সুনির্দিষ্ট ক্রমানুসারে ঘটে, যেমন: বসা, হামাগুড়ি দেওয়া, হাঁটা।
  • শিশুর বিকাশ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
  • বিকাশ সাধারণ থেকে বিশেষ দিকে এবং কেন্দ্র থেকে প্রান্তে হয়।
  • শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগিক, এবং বৌদ্ধিক দিকগুলির বিকাশ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
  • বংশগতির পাশাপাশি পরিবেশও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার:

শিশু বিকাশ একটি জটিল ও ক্রমানুসারে হওয়া প্রক্রিয়া, যা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আবেগিক দিকগুলোকে একত্রে নিয়ে এগোয়। প্রতিটি শিশুর বিকাশ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে এবং এর ওপর বিভিন্ন প্রভাবক কাজ করে, যেমন—পরিবার, সমাজ, শিক্ষা, পুষ্টি এবং পরিবেশ। শিক্ষকদের উচিত এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে শিশুদের যথাযথ সহায়তা প্রদান করা এবং তাদের বিকাশের সমস্ত দিক সম্পর্কে সচেতন থাকা।

বিকাশের ধারণা এবং নীতি থেকে Quize এ অংশগ্রহণ করুন Click Here

Table of Contents

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top